জি,এম আল ফারুক, আশাশুনি (সাতক্ষীরা): বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লীয় জেলার আশাশুনির প্রধান সমস্যা হলো উপক‚লীয় বাঁধ রক্ষার সমস্যা ও দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতা। বাঁধ ভাঙ্গন ও জলাবদ্ধতায় জর্জরিত এই এলাকার মানুষ এখন চরম বিপদে রয়েছে। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত মানুষ কর্মহীন ও সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। বিপদাপন্ন মানুষদেরর রক্ষার জন্য সুদূর প্রসারী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের কাছে এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন। বাঁধ রক্ষা ও জলাবদ্ধতা দীর্ঘ মেয়াদী এ সমস্যার কারণে সাতক্ষীরা জেলার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো আশাশুনি উপজেলা। উপজেলা ১, ২, ৪, ৬-৮ ও ৭/২ পোল্ডারের অন্তর্ভূক্ত। উপজেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব অংশে শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, আনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নে বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবনের আশংকা অত্যাধিক এবং উত্তর ও পশ্চিম অংশে তথা শোভনালী, বুধহাটা, কুল্যা, দরগাহপুর, কাদাকাটি ও বড়দল ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার প্রকটতা বেশি। উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ অধিবাসী বিগত ২০-২৫ বছর ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট সর্বনাশা জলোচ্ছ¡াসের প্লাবনে বিপর্যস্ত ও জলাবদ্ধতার তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী এখন সর্বশান্ত ও নিঃস্ব অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। বাস্তচ্যুতির মত ঘটনা এলাকায় ব্যাপক হারে ঘটে চলেছে। উপজেলার কিছু গ্রাম, গ্রামাংশ এবং সমতল, চাষাবাদি ও চিংড়ী ঘের সহ একটি বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে মানচিত্র পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তার বড় উদাহরন আশাশুনি সদর ইউনিয়নের জেলেখালী নামক গ্রাম। গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে আশাশুনির ম্যাপ হতে হারিয়ে গেছে। এ এলাকায় ভবিষ্যতে বসবাস করা যাবে কি না এবং জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হবে কি না ? ক্রমাগত পরিস্থিতিতে জনমনে এধরনের প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। বিগত ষাট-এর দশকে সাতক্ষীরা এলাকায় পোল্ডার প্রযুক্তি দ্বারা নদী তীরে উপকূলীয় বাঁধ নির্মান করা হয়। এর মাধ্যমে এলাকার বিল-খাল থেকে বর্তমান চলমান নদীগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পোল্ডারের পূর্বে জোয়ার বাহিত পলি অবক্ষেপিত হতো বিলের মধ্যে, এখন সে পলি অবক্ষেপিত হয় নদী বক্ষে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে পোল্ডারের বাঁধগুলোর বয়স হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ বছর এবং দীর্ঘকাল ধরে বাঁধগুলো সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। অপরদিকে অপরিকল্পিত নোনা পানির চিংড়ী চাষ প্রভৃতি কারণে বাঁধগুলো হয়ে পড়েছে ভীষণভাবে দুর্বল ও ভঙ্গুর। সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস, উঁচ্চ জোয়ার এবং বিশাল উজান অঞ্চলের বর্ষার পানির চাপ সহ্য করার সক্ষমতা বাঁধগুলোর আর নেই। ফলে বাঁধ ভেঙ্গে বা উপচিয়ে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে প্রতিবছর। আশাশুনি এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণদায়িনী নদী বেতনা, মরিচ্চাপ, গলঘেষিয়া ও কপোতাক্ষ নদ বর্তমানে ভরাট হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুণছে। শেষ ভরসাস্থল খোলপেটুয়া নদীও দ্রæত গতিতে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং নিচের সুন্দরবনের নদীগুলোও দ্রæত পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব নদীর অকাল মৃত্যুর কারণে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় বাঁধগুলোর উপর অত্যাধিক পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিগত ১৫-২০ বছর যাবৎ উপকূলীয় বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবন এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সিডর, সুনামী ও আইলার মতো বিধ্বংসী জলোচ্ছ¡াসের পর ২০২০ সালের ২০ মে এলাকায় সংঘটিত হয় সুপার সাইক্লোন আম্ফান। উপজেলার ৭/২ নং পোল্ডারের হরিশখালী, চাকলা, কুড়িকাহুনিয়া, হিজলী-কোলা ও সনাতনকাটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙ্গে প্রতাপনগর ইউনিয়ন, ৪নং পোল্ডারের হাজরাখালী, কোলা, কলিমাখালী, থানাঘাটা, বকচর, মাড়িয়ালায় বাঁধ ভেঙে শ্রীউলা ইউনিয়ন এবং জেলেখালী ও দয়ারঘাট এলাকায় দু’টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে আশাশুনি সদর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এমতাবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে এলাকাবাসীর দাবি, বিপন্ন আশাশুনি উপজেলার মানুষকে বাঁচাতে এবং এলাকার জনপদকে রক্ষা করতে আগামী ঝড়-জলোচ্ছ¡াস মৌসুমের আগেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো সংস্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া।
কমেন্টস